
by আহমদ ছফা
‘অরাতচক্র’ উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধ কালে কলকাতায় আশ্রয়রত প্রায় এক বকাটি শরনার্থী; যাদের মধ্যে আট লক্ষ হিন্দু এবং বিশ রক্ষ মুসলমান ছিল- সে শরণার্থীদের মানবেতর জীবন সম্পর্কে ক্ষীণ ছায়াপতের সাথে তৎকালীণ পূর্ব পাকিস্তান থেকে কলকাতায় ট্রেনিং নিতে যাওয়া ট্রেনিং ক্যাম্পের যুবক ও অন্যান্য মানুষদের সংগ্রাম এবং তাদের উচ্চকিত হয়ে ওঠা অসহায়ত্ব বর্ণণার সাথে সাথে তায়েবা নাম্নী এক প্রগতিশীল দেশপ্রেমিক যুবতীর অসুস্থতায় নিঃশেষ হয়ে মৃত্যুবরণের কথাি উপন্যাসোচিতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। উত্তমপুরুষে বর্ণিত আমি চরিত্র্রটি লেখক নিজে এবং তিনিই এ উপন্যাসের নায়ক। মুক্তিযুদ্ধের কারনে পাকিস্তানী সৈন্যদের দ্বারা নিগৃহীতা যুবতী কলকাতার পি.জি হাসপাতালে চিকিৎসারতা তায়েবা-এ উপন্যাসের নায়িকা। লেখকের সাথে তায়েবার চার বছরের একটি মানসিক সম্পর্ক ছিল; লেখক কলকাতায় তাকে হাসপাতাল থেকে খুঁজে বের করেছেন। তায়েবা, যার ব্যাক্তিত্ব প্রবল এবং প্রখর; কারো কাছে সে কোনো অধিকার খাটায় না- লেখকের কা্ছে সে ভাত ও মাছ রান্না করে নেওয়ার অধিকার খাটিয়েছে। তায়েবা মনে প্রানে লেখককে ভালোবাসতাে। লিউক্যামিয়া রোগে তায়েবা নিঃশেষিত হয়ে যাচ্ছিল; অচর্না নাম্নী এক অধ্যাপিকা এবং পত্রিকা সম্পাদকের সাথে লেখকের যোগাযোগ ও অন্তরঙ্গতার সূত্র যখন তায়েবাকে ঈর্ষান্বিত করে তুলেছিল তখনই শুধু এতদিন ঈর্ষাহীন এবং পার্টিগত প্রাণ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত যুবতী তায়েবা লেখকের প্রতি নির্ভরশীল এবং সমর্পণপ্রবণ হয়ে উঠেছিল। তায়েবার বোন ডোরা, তার ভাই হেনা, ডোরার স্বামী জাহিদুল, ডা. মাইতি, তায়েবার মা, মাসুদ, খোরশেদ, সুনীল, শেখ মুজিব, অধ্য্যাপক নরেশ, ইয়াহহইয়া, শরণার্থীবৃন্দ, ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, আপামর স্বদেশপ্রেমি, বাঙালী, তার উপন্যাসের মধ্যে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভূমিকা রেখেছে। প্রগতিশিল মুক্তমনা ও ব্যাক্তিত্বশালী তায়েবার প্রতি লেখক চরিত্রটির অর্থাৎ দানিয়েলের গভীর প্রেমপ্রবনতামূলক মূলকাহিনির সাথে সমম্পর্কিত করে অন্যান্য চরিত্র সংযোগের মাধ্যমে আঙ্গিক কাঠামো গড়ে উঠেছে।
প্রকাশক: হাওলাদার প্রকাশনী


